ঢাকা , বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

একযুগ পর সেনাকুঞ্জে বেগম খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ একযুগ পর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

 

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে তিনি ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান। গাড়ি থেকে নেমে তিনি হুইল চেয়ারে বসে অনুষ্ঠানস্থলে যান।

 

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে তিনি সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, তখন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এরপর আর তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি।

 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।

 

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে নিজের সাদা গাড়িতে চড়ে সেনানিবাসের উদ্দেশে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

 

 

অনুষ্ঠানস্থলে খালেদা জিয়ার বসার ব্যবস্থা হয়েছিল অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে। খালেদা জিয়া তার আসনে বসার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অসুস্থতার মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তাদের দুজনকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরীসহ আমন্ত্রিত জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিলেন। এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল।

 

দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। প্রতি ছয় মাস পর পর তার এই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেন। এর আগে সাময়িক মুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে কখনো বাসা থেকে বের হননি। রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কোনো ধরনের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি। খালেদা জিয়া এ দিন বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন।

 

এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি।

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্য ইমেইল

জনপ্রিয় সংবাদ

একযুগ পর সেনাকুঞ্জে বেগম খালেদা জিয়া

প্রকাশিত : ০৭:১৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ একযুগ পর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

 

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে তিনি ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান। গাড়ি থেকে নেমে তিনি হুইল চেয়ারে বসে অনুষ্ঠানস্থলে যান।

 

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে তিনি সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, তখন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এরপর আর তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি।

 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।

 

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে নিজের সাদা গাড়িতে চড়ে সেনানিবাসের উদ্দেশে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

 

 

অনুষ্ঠানস্থলে খালেদা জিয়ার বসার ব্যবস্থা হয়েছিল অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে। খালেদা জিয়া তার আসনে বসার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অসুস্থতার মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তাদের দুজনকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরীসহ আমন্ত্রিত জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিলেন। এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল।

 

দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। প্রতি ছয় মাস পর পর তার এই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেন। এর আগে সাময়িক মুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে কখনো বাসা থেকে বের হননি। রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কোনো ধরনের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি। খালেদা জিয়া এ দিন বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন।

 

এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি।