কখনো সাংবাদিক, কখনো ডিবি পুলিশ (গোয়েন্দা), কখনো বা কাস্টমস কর্মকর্তা, কখনো বা সচিব। বহুরূপের সাজে সাজতো তারা। তবে তাদের একটিই টার্গেট। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) থেকে শনিবার (৩০ মার্চ) রাত পর্যন্ত চট্টগ্রামের কোতোয়ালী, হাটহাজারী, আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে এমন বহুরুপী ছিনতাইকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি বিদেশফেরত এক যাত্রীর স্বর্ণালংকার, আইফোন, ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেওয়ায় অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ঐ বিদেশযাত্রীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া বিভিন্ন মালামাল ও স্বর্ণ বিক্রির টাকাও উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন— মুজিবুল হাসান তাসির (১৯), সাজ্জাদ হোসেন সিফাত (২২), জাহাঙ্গীর আলম (৩৩), মির আহম্মদ বিপ্লব (৩৫), মো. শাহাদাত হোসেন (৩৮) এবং মো. হানিফ ওরফে আসাদ (৩৮)।
পুলিশ জানায়, ‘গ্রেপ্তারকৃত এসব আসামিরা বিদেশ ফেরত যাত্রীদের টার্গেট করে কখনো কাস্টমস কর্মকর্তা, কখনো ডিবি পুলিশ কখনো বা সাংবাদিক বা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিতো। এরপর গাড়িতে উঠে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিতো।
গত ২৫ মার্চ বিদেশ ফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিদেশ ফেরত এক যাত্রীর গাড়ি থামিয়ে সবকিছু লুট করে নেয় তারা। মোহাম্মদ নুর উদ্দিন আশরাফী নামে এক বিদেশফেরত যাত্রী প্রাইভেটকার যোগে মালামাল নিয়ে হাটহাজারী ফেরার পথে চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় ওয়াকটকির ইশারায় গাড়ি থামায় এসব ছিনতাইকারীরা। পরে তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রাইভেটকারে ওঠে বসে।
এ সময় তাদের কাছে অবৈধ মালামাল আছে বলে তল্লাশির জন্য মনছুরাবাদ ডিবি অফিসে নিয়া যাওয়ার কথা বলে সিআরবি কাঠের বাংলো এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা ১২টি স্বর্ণের হাতের বালা, ৯টি স্বর্ণের রিং, ৬টি স্বর্ণের লকেটসহ ৩শ’ গ্রাম স্বর্ণালংকার, ৩টি মোবাইল সেট; যার মধ্যে একটি আইফোন-১২, একটি স্যামসাং এস ২৩ আল্ট্রা, একটি স্যামসাং এস ২৪ আল্ট্রা এবং ৩টি ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ও ৬ কার্টুন ইএসএসই ব্র্যান্ডের সিগারেট ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
পরে এ ঘটনায় গত ২৮ মার্চ ভুক্তভোগী মোহাম্মদ নুর উদ্দিন আশরাফী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর পরই কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে একে একে সবাইকে গ্রেপ্তার করে ছিনতাই যাওয়া মালামাল উদ্ধার করে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মো. ওবায়দুল হক জানান, ‘আসামিরা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।’
ছিনতাইকারীদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ওসি বলেন, ‘ওই চক্রের একজন সদস্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে বিদেশ ফেরত বিভিন্ন যাত্রীদের গতিবিধি, পরিবহনকৃত গাড়ির তথ্য এবং যাত্রীদের অবয়বের বর্ণনা সংগ্রহ করে একাধিক ছিনতাইকারী চক্রের কাছে সরবরাহ করে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজর এড়ানোর জন্য প্রেস স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল যোগে যাত্রীদের অনুসরণ করে। পরে সুবিধামত ফাঁকা জায়গায় সিগন্যাল দিয়ে গাড়ি থামায়।’
তিনি আরও বলেন, গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইকারীরা নিজেদের কখনো ডিবি পুলিশ আবার কখনো কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চেকপোস্টের কথা বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এরপর যাত্রীদের সাথে থাকা স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, মোবাইলসহ দামি দামি জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরবর্তীতে যাত্রীদের গাড়িতে তুলে থানায় নিয়া যাওয়ার কথা বলে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে গিয়ে যাত্রীদের রেখে পালিয়ে যায়। এরপর ছিনতাইকৃত মালামালগুলো নিজেদের বলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে দেয় তারা।’