ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার ধারেকাছেও যায়নি, আর সেই পারফরম্যান্সের ফলাফল এসেছে ২৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারের মাধ্যমে।
এই হারে বাংলাদেশ তাদের টেস্ট ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়। বোলিং কিংবা ব্যাটিং—কোনো বিভাগেই নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি টাইগাররা। এদিকে, এই জয়ের মাধ্যমে ভারত ঘরের মাঠে টানা ১৮ টেস্ট সিরিজ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রাখলো।
চেন্নাইয়ের উইকেটের চরিত্র বিবেচনায় দুই দলই ৩ পেসার এবং ২ স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। বাংলাদেশের পেসাররা ভারতের প্রথম ইনিংসে কিছুটা সফল হয়েও ৯ উইকেট তুলে নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্পিন জুটি রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা পুরো বাংলাদেশ দলকে একাই গুঁড়িয়ে দেন। বাংলাদেশ শেষপর্যন্ত ৯টি উইকেটই হারায় তাদের স্পিনের কাছে।
এই বাস্তবতা বিবেচনায় ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার মনে করছেন, বাংলাদেশের একাদশে পেসার কমিয়ে একজন অতিরিক্ত স্পিনার রাখা উচিত কানপুর টেস্টের জন্য। তিনি তৃতীয় স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলামের কথা উল্লেখ করেছেন। মাঞ্জরেকারের মতে, কানপুরের টার্নিং পিচে তাইজুল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারেন।
মাঞ্জরেকার সম্প্রতি ইএসপিএন ক্রিকইনফোর একটি ভিডিওতে চেন্নাই টেস্ট নিয়ে তার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা সম্পর্কে কথা বলেন। বিশেষ করে, বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হওয়াকে দলের প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
মাঞ্জরেকার বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপেনাররা ভালো স্কিল ও অ্যাপ্রোচ দেখালেও, তাদের রানগুলো বড় স্কোরে পরিণত করতে পারেনি। তারা ৩০ রান পর্যন্ত ভালো খেলেছে, কিন্তু এরপর তাদের মনে হয়েছে যেন মানসিক শক্তি বা জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। ভারতকে চ্যালেঞ্জ করতে হলে এই রানগুলোকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে হবে।’
তাইজুলের প্রসঙ্গে মাঞ্জরেকার বলেন, ‘ভারতের পিচের চরিত্র অনুযায়ী, তাইজুল ইসলাম এমন একজন বোলার যিনি ভারতীয় ব্যাটারদের বিপদে ফেলতে পারেন। টার্নিং উইকেটে তিনি বিপজ্জনক হতে পারেন। ভারতীয় কন্ডিশনে খেললে আপনি সবসময় ৩ পেসার নিয়ে মাঠে নামতে চাইবেন না। গ্রিন টপ পিচেও তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে পিচ টার্ন করবে। তাই দুই পেসারই যথেষ্ট হবে।’
এছাড়াও মাঞ্জরেকার আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে আরও শক্তপোক্ত হওয়া উচিত। তিনি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাসের উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এখন তাদের আরও মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে সিনিয়রদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলের পেস ইউনিটে ভালো সম্ভাবনা আছে এবং ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যও কম নয়, কিন্তু মানসিকতার জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন।’
কানপুর টেস্টে বাংলাদেশ দলের জন্য মাঞ্জরেকারের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্টকে উইকেটের চরিত্র ও প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বিবেচনায় নিয়ে সঠিক কৌশল সাজাতে হবে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত স্পিনার নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে।