টানা ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে অন্তত ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও চিংড়ির ঘের। ভূমিধসের ঝুঁকিতে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কর্তৃক টেকনাফে ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বৃষ্টিপাত হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সদর ইউনিয়নে বসবাসকারী ৮০০ পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া টেকনাফের লেদা, জাদিমুড়া ও আলীখালী ক্যাম্পের ৭০০ ঘর ডুবে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যেসব গ্রামে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে আমরা তাদের সহায়তা করছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন গ্রামে ২৫০ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। পর্যায়ক্রমে ৭০০ পরিবারকে শুকনো খাদ্য বিতরণ করা হবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ধসের ঝুঁকি আছে। সেসব লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মাইকিং করা হয়েছে।
টেকনাফ সদরের বাসিন্দা মো. আলী বলেন, ঘরে পানি ঢুকেছে। সকাল থেকে শুধু চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। আশপাশে অন্তত ৩৫টি পরিবার রয়েছে। সবার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে পারেনি। বেশি বৃষ্টি হলেই সব তলিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফের জাহঁলিয়া পাড়া, লেংগুরবিল, মিটা পানির ছড়া, হাবির ছড়া, দক্ষিণ লেংগুরবিল, দক্ষিণ লম্বরী, নতুন পল্লান পাড়া, মুন্ডার ডেইল, শাহপরীরদ্বীপ লামার পড়া, মহেশখালীয়া পাড়া, হ্নীলা রঙিখালী, আলিখালী, দমদমিয়াসহ শত শত গ্রামে বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে এবং ধান ক্ষেত, পানের বরজ, বিভিন্ন ফলের ক্ষেত, মাছের প্রজেক্টসহ অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভারি বৃষ্টিতে অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। হাজারো পানিবন্দি মানুষের কষ্টের শেষ নেই। ভারি বর্ষণে তার এলাকার ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি প্রধান সড়কেও পানি উঠেছে।
টেকনাফে জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা জাফর আলম বলেন, ক্যাম্পের অনেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। নারী ও শিশুরা অনেক কষ্টে আছে। আমরা তাদের সহায়তার চেষ্টা করছি। রোহিঙ্গা ঘরে থাকতে পারছে না, আমরা অনেক আতঙ্কে রয়েছি।