ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) চিফ হিট অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিন। গত বছরের মে মাসে মেয়রকন্যাকে হিট অফিসার নিয়োগের খবর জানাজানি হলে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক) এবং তিনি ফাউন্ডেশনের হয়েই কাজ করছেন। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি মেয়রকন্যা বুশরাকে। চিফ হিট অফিসার হিসেবে তার কর্মকাণ্ডও থমকে গেছে। যোগাযোগ করা হলে বুশরা আফরিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি দেশেই রয়েছেন। শিগগিরই নিজের কাজ শুরু করতে চান।
সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের অভিপ্রায় অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া সবার চাকরি বাতিল করেছে ডিএনসিসি। সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক অফিস আদেশে উল্লেখ করেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের অভিপ্রায় অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯ মোতাবেক নিয়োগকৃত সব উপদেষ্টা, পরামর্শক এবং কুক ও পিয়নের নিয়োগ ১৯ আগস্ট থেকে বাতিল করা হলো।
ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের নিয়োগ বহাল রয়েছে। কারণ তিনি সিটি করপোরেশন থেকে নিয়োগ পাননি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরশট-রকের সঙ্গে ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টায় যৌথভাবে কাজ করতে সমঝোতা রয়েছে ডিএনসিসির। সেখানেই চিফ হিট অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন মেয়রকন্যা বুশরা আফরিন। আরশট-রকের পক্ষ থেকেও ঢাকায় কোনো অফিস নেই বুশরার।
২০২৩ সালের ৩ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরশট-রকের সহযোগিতায় ঢাবির ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ ও ডিএনসিসি যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে আতিকুল ইসলাম নিজেই মেয়ের এই পদে কাজ করার বিষয়টি জানান। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে তাপপ্রবাহ নিয়ে কাজ করার জন্য আরশট-রকের গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সিএইচও হিসেবে বুশরা আফরিন ঢাকা উত্তর সিটিকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্বে দিচ্ছেন। তাপমাত্রা কমাতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছাড়াও ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণে কাজ করার কথা তার।
ওইসময় নিয়োগের খবর জানাজানি হলে ডিএনসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বুশরাকে নিয়োগ দিয়েছে আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাকে নিয়োগ দেয়নি। সিটি করপোরেশন থেকে তাকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয় নেই। তিনি এখানে বসবেনও না, এখান থেকে বেতন বা গাড়ি নেবেন না। আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ডিএনসিসির চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেমন কাজ করি, তেমনি আরশট-রকফেলারের সঙ্গে ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ইস্যুতে কাজ করার একটি চুক্তি হয়েছে।
চিফ হিট অফিসার নিয়োগের বিষয়ে আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কোনো দেশের সরকার তাপ নিয়ন্ত্রণের কাজকে অগ্রাধিকার দিলে স্থানীয় কর্মকর্তারা চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেবেন। কোনো নগরের তাপপ্রবাহের প্রভাব মোকাবিলায় মেয়র বা নেতৃত্বস্থানীয় অন্যরা চিফ হিট অফিসার পদ তৈরি করে এ পদে নিয়োগ দিতে পারেন।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএনসিসির তৎকালীন সিইও সেলিম রেজা রেজা বলেন, স্থানীয় কর্মকর্তা বলতে আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বোঝানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা না। আমি তো সিইও। আমরা নিয়োগ দেইনি। আমাদের অর্গানোগ্রামেই এমন কোনো পদ নেই। আমরা কীভাবে নিয়োগ দেব?
কানাডায় গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে লেখাপড়া করা বুশরা বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনে একজন নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। গত বছরের ৮ মে তার বাবা আতিকুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য গর্ব যে আমাদের একজনকে এশিয়ার মধ্যে চিফ হিট অফিসার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে আমাদের সিটি করপোরেশনের কোনও সম্পর্ক নেই ডিএনসিসিতে এরকম চিফ হিট অফিসারের কোনও পোস্ট নেই। তার বেতন-ভাতা সিটি করপোরেশন দেবে না। তার জন্য সিটি করপোরেশনে অফিসও নেই।
ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, সবশেষ একটি জরিপের কাজ করছিলেন বুশরা আফরিন। কাজটি শেষ পর্যায়ে থাকলেও শেষ হয়নি। এ কাজে প্রায়ই তিনি উত্তর সিটির নগর ভবনে আসতেন। সেখানে জরিপকাজে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণে যুক্ত থাকতেন। এছাড়া উত্তর সিটিতে পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল এবং স্বাস্থ্য বিভাগের নানা কর্মকান্ডে অংশ নিতেন বুশরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বুশরা আফরিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যে জরিপকাজ চলছি তা আগস্টে শেষ হওয়া কথা ছিল। তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে জরিপকাজ বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই কাজটি শুরু করতে চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতার পালাবদলে ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে পদ থেকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।