বন্যা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঁচ হাজার পরিবারের জন্য জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন মো. ফরিদুল আলমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বন্দরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনে রেডিও কন্ট্রোলের সঙ্গে ভিএইএফ চ্যানেল—১৬/১২ অথবা ৮৮০-২৩-৩৩৩২৬৯১৬ ও ০১৭৫৯০৫৪২৭৭ নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে।
বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে বিতরণের জন্য ত্রাণ সামগ্রীগুলো নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য বন্দরের একটি বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় যে কোনো মুহূর্তে বোটটি পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ৮ উপজেলা বন্যা কবলিত। বুধবার থেকে ফটিকছড়ি উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বাগানবাজার, দাঁতমারা ইউনিয়নসহ ফটিকছড়ি পৌরসভা, নাজিরহাট পৌরসভা, সুন্দরপুর, পাইন্দং, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, নারায়ণহাট, ভূজপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ ছাড়া লেলাং, সমিতিরহাট, রোসাংগিরী, জাফতনগর, বক্তপুর, নানুপুর, ধর্মপুরসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেক পরিবারকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে।
এখনো পানিবন্দি রয়েছে শত শত পরিবার। শত শত বাড়িঘর পানির নিচে। খাবার, ওষুধ ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়। ভয়াবহ বন্যায় এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক কেন্দ্র মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক, গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট- আজাদীবাজার, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানিতে ডুবে আছে। হালদার ওপর নির্মিত নারায়ণহাটের কাঠের ব্রিজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে। কাপ্তাই সড়কের গুমাইবিলের মরিয়মনগর ও চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়নের বিশাল এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।
মিরসরাইয়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটছে ১২ হাজার মানুষের। উপজেলার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় উপজেলার করেরহাট, ওসমানপুর, ইসাখালি, কাটাছড়া, খৈয়াছড়া ও ধুম ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে অনেক বাড়িঘরসহ ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট।
হাটহাজারীর নাজিরহাট নতুন ব্রিজ এলাকায় হালদার তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে বাঁধের অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকেছে পানি। হালদা নদীর উজান থেকে আসা পানিতে নারায়ণহাট, ভুজপুর, পাইন্দং, লেলাং, সমিতিরহাট, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিলসহ উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলা ও সংলগ্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এক লাখ মানুষ। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মনিটরিং টিম গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়।