ঢাকা , শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৬ টাকা

কোনো সংকট না থাকলেও আবারও বাড়ল চালের দাম। ১০ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এরমধ্যে বন্যায় ত্রাণ হিসেবে চাহিদা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম।

 

একইসঙ্গে দেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের মোকাম গুলোতে ধান ও চালের মজুত গড়ে তুলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় বেশকিছু ধানের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকদিন পর ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের, কিন্তু আউশ ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাতে দাম বেড়েছে ধানের। এর প্রভাব পড়েছে চালেও।

 

 

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আউশ ধান খুব বেশি চাষ হয় না, তাও আউশ ধান ঘরে তোলার কথা মাস খানেক পর, তাই এখনই ধান নষ্টের প্রভাব চালের দামে পড়ার কথা না।

 

ভোক্তাদের দাবি, চট্টগ্রাম ও আশপাশে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে বিতরণের কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা চালসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে চার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর চাক্তাই চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামে চালের কোনো মোকাম না থাকলেও নগরীর পাহাড়তলী বাজারের ২০০ গুদামে প্রতিদিন ১০০ ট্রাকবোঝাই দেড় হাজার টন এবং চাক্তাই বাজারের ১০০ গুদামে ১ হাজার ৩০০ টন চাল আসছে।

 

 

দেশে বন্যা দেখা দেওয়ার আগে, অর্থাৎ গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাজারে সাধারণ মানের মোটা সিদ্ধ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা দরে। কিন্তু এখন সেই চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। একইভাবে ২ হাজার ২০০ টাকার গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার নূরজাহান স্বর্ণা ২ হাজার ৮০০ এবং ৩ হাজার ২৫০ টাকার ঝিরাশাইল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

 

এদিকে, সিদ্ধ চালের মতো অবস্থা আতপ চালের বাজারেও। ১ হাজার ৯০০ টাকার ইরি আতপ ২ হাজার ৪০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার বেথি ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৩ হাজার ২০০ টাকার কাটারী ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এলসি খুলে রাখা যেতে পারে। এতে করে দেশে চালের সংকট দেখা দিলে বা দাম বেড়ে গেলে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে মনিটরিং। তা না হলে লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে চালের বাজার।

 

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর মেসার্স আজমীর স্টোরের মালিক এস এম নিজাম উদ্দিন জানান, বন্যার কারণে আড়তগুলোতে চাল আমদানি কম হয়েছে। পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করায় দাম বাড়ছে।

 

 

তবে এখনই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ধানের প্রভাব বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আউশ-আমন মিলে বীজতলাসহ রোপা ধান ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১৫ হাজার ৯৫৮ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ১৫ হাজার ৫১৮ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউশ ধান দেশে বেশি চাষ হয় না। আর আমন ধান ঘরে আসার কথা ডিসেম্বরে। ধানের ক্ষতির প্রভাব এখনই বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই। আর যেসব কৃষকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।

 

 

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্য ইমেইল

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৬ টাকা

প্রকাশিত : ১২:১২:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কোনো সংকট না থাকলেও আবারও বাড়ল চালের দাম। ১০ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এরমধ্যে বন্যায় ত্রাণ হিসেবে চাহিদা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম।

 

একইসঙ্গে দেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের মোকাম গুলোতে ধান ও চালের মজুত গড়ে তুলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় বেশকিছু ধানের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকদিন পর ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের, কিন্তু আউশ ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাতে দাম বেড়েছে ধানের। এর প্রভাব পড়েছে চালেও।

 

 

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আউশ ধান খুব বেশি চাষ হয় না, তাও আউশ ধান ঘরে তোলার কথা মাস খানেক পর, তাই এখনই ধান নষ্টের প্রভাব চালের দামে পড়ার কথা না।

 

ভোক্তাদের দাবি, চট্টগ্রাম ও আশপাশে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে বিতরণের কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা চালসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে চার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর চাক্তাই চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামে চালের কোনো মোকাম না থাকলেও নগরীর পাহাড়তলী বাজারের ২০০ গুদামে প্রতিদিন ১০০ ট্রাকবোঝাই দেড় হাজার টন এবং চাক্তাই বাজারের ১০০ গুদামে ১ হাজার ৩০০ টন চাল আসছে।

 

 

দেশে বন্যা দেখা দেওয়ার আগে, অর্থাৎ গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাজারে সাধারণ মানের মোটা সিদ্ধ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা দরে। কিন্তু এখন সেই চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। একইভাবে ২ হাজার ২০০ টাকার গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার নূরজাহান স্বর্ণা ২ হাজার ৮০০ এবং ৩ হাজার ২৫০ টাকার ঝিরাশাইল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

 

এদিকে, সিদ্ধ চালের মতো অবস্থা আতপ চালের বাজারেও। ১ হাজার ৯০০ টাকার ইরি আতপ ২ হাজার ৪০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার বেথি ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৩ হাজার ২০০ টাকার কাটারী ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এলসি খুলে রাখা যেতে পারে। এতে করে দেশে চালের সংকট দেখা দিলে বা দাম বেড়ে গেলে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে মনিটরিং। তা না হলে লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে চালের বাজার।

 

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর মেসার্স আজমীর স্টোরের মালিক এস এম নিজাম উদ্দিন জানান, বন্যার কারণে আড়তগুলোতে চাল আমদানি কম হয়েছে। পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করায় দাম বাড়ছে।

 

 

তবে এখনই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ধানের প্রভাব বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আউশ-আমন মিলে বীজতলাসহ রোপা ধান ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১৫ হাজার ৯৫৮ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ১৫ হাজার ৫১৮ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউশ ধান দেশে বেশি চাষ হয় না। আর আমন ধান ঘরে আসার কথা ডিসেম্বরে। ধানের ক্ষতির প্রভাব এখনই বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই। আর যেসব কৃষকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।