ঢাকা , শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

সিআরবি টাইগারপাসে গাছ কাটার উদ্যোগ, সিপিবির প্রতিবাদ

চট্টগ্রাম: নগরের সিআরবি সংলগ্ন টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত দ্বিতল সড়কে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গাছ কাটার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

সোমবার (১ এপ্রিল) বিকেলে গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান জেলা সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাহাড়, নদী, সাগরের মিলন মোহনায় গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহরকে অনন্যরূপে উপস্থাপন করে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত বৃক্ষরাজি ঘেরা দ্বিতল সড়কটি। নানা প্রজাতির শত শত বৃক্ষ, গুল্ম, লতা কী বিচিত্র মোহমায়ায় জড়িয়ে আছে, যেখানে গেলে প্রাণভরে একটু নিঃশ্বাস নিতে পারে নগর বাসী। বাংলাদেশে আর কোথাও এমন সুন্দর একটি সড়কের নজির নেই।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি, প্রকৃতির ছায়াঘেরা এই নান্দনিক জায়গাটিকেও তথাকথিত উন্নয়নের নামে ক্ষতবিক্ষত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা জানতে পারলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ডে দ্বিতল সড়কের পাশে এবং বিভাজকে থাকা শতবর্ষী বৃক্ষসহ অন্তঃত ৪৬টি গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংবাদ জানার পর থেকে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

চট্টগ্রামের নাগরিকদের ক্ষোভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আমরাও সিডিএর এ উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ভাবতে অবাক লাগে, সিডিএর মতো একটি রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ সংস্থা, যাদের কাজ হওয়া উচিত ছিল এ শহরকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজরদারি রাখা, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, তারাই আজ হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিন্দুমাত্র জনমতের তোয়াক্কা না করে, বিশেষজ্ঞদের অভিমতের মূল্যায়ন না করে, নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা এ শহরকে ইট-পাথরের জঞ্জালে পরিণত করেছে। কোনো ধরনের আপত্তির তোয়াক্কা না করে তারা চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নির্মাণের জন্য ১৫টি পাহাড় কেটেছে। অপরিকল্পিত সড়ক-ফ্লাইওভার নির্মাণ করে ক্ষেত্রবিশেষে জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের নান্দনিকতাকে ধ্বংস করেছে। প্রাণ-প্রকৃতিকে ক্রমাগত ধ্বংসের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি নির্জীব যান্ত্রিক শহরে পরিণত করে এখন আমাদের প্রকৃতির যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তাতেও হাত দিচ্ছে সিডিএ।

তথাকথিত জনসম্পৃক্ততাহীন উন্নয়নের নামে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থার অনেক অনাচার চট্টগ্রামবাসী সহ্য করে আসছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্লিপ্ত ভূমিকাকেও আমরা দায়ী করতে চাই। এ শহরের পরিবেশ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তাদের কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখা যায় না।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব অনাচারের অবসান হওয়া দরকার। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু যে উন্নয়ন প্রাণ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, যে উন্নয়ন মানুষের নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গাটুকু কেড়ে নেয়, যে উন্নয়ন মানুষের স্বস্ত্বির বদলে দুর্ভোগ বাড়ায়, সেই উন্নয়ন আমরা চাই না। এ শহর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই শহরের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করা উচিৎ। দ্বিতল সড়কের গাছগুলো নিছক একেকটি বৃক্ষ নয়, এর সঙ্গে চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আবেগ জড়িত। এই গাছের শরীরে কুড়াল চালানোর কোনো দুঃসাহস যেন কেউ না করে, এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই। সিডিএকে বলব, অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করুন। দ্বিতল সড়ক এখন যেভাবে আছে সেভাবেই রাখুন। অন্যথায় সিপিবি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলবে।

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্য ইমেইল

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

সিআরবি টাইগারপাসে গাছ কাটার উদ্যোগ, সিপিবির প্রতিবাদ

প্রকাশিত : ০২:১৯:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম: নগরের সিআরবি সংলগ্ন টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত দ্বিতল সড়কে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গাছ কাটার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

সোমবার (১ এপ্রিল) বিকেলে গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান জেলা সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাহাড়, নদী, সাগরের মিলন মোহনায় গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহরকে অনন্যরূপে উপস্থাপন করে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত বৃক্ষরাজি ঘেরা দ্বিতল সড়কটি। নানা প্রজাতির শত শত বৃক্ষ, গুল্ম, লতা কী বিচিত্র মোহমায়ায় জড়িয়ে আছে, যেখানে গেলে প্রাণভরে একটু নিঃশ্বাস নিতে পারে নগর বাসী। বাংলাদেশে আর কোথাও এমন সুন্দর একটি সড়কের নজির নেই।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি, প্রকৃতির ছায়াঘেরা এই নান্দনিক জায়গাটিকেও তথাকথিত উন্নয়নের নামে ক্ষতবিক্ষত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা জানতে পারলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ডে দ্বিতল সড়কের পাশে এবং বিভাজকে থাকা শতবর্ষী বৃক্ষসহ অন্তঃত ৪৬টি গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংবাদ জানার পর থেকে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

চট্টগ্রামের নাগরিকদের ক্ষোভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আমরাও সিডিএর এ উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ভাবতে অবাক লাগে, সিডিএর মতো একটি রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ সংস্থা, যাদের কাজ হওয়া উচিত ছিল এ শহরকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজরদারি রাখা, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, তারাই আজ হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিন্দুমাত্র জনমতের তোয়াক্কা না করে, বিশেষজ্ঞদের অভিমতের মূল্যায়ন না করে, নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা এ শহরকে ইট-পাথরের জঞ্জালে পরিণত করেছে। কোনো ধরনের আপত্তির তোয়াক্কা না করে তারা চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নির্মাণের জন্য ১৫টি পাহাড় কেটেছে। অপরিকল্পিত সড়ক-ফ্লাইওভার নির্মাণ করে ক্ষেত্রবিশেষে জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের নান্দনিকতাকে ধ্বংস করেছে। প্রাণ-প্রকৃতিকে ক্রমাগত ধ্বংসের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি নির্জীব যান্ত্রিক শহরে পরিণত করে এখন আমাদের প্রকৃতির যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তাতেও হাত দিচ্ছে সিডিএ।

তথাকথিত জনসম্পৃক্ততাহীন উন্নয়নের নামে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থার অনেক অনাচার চট্টগ্রামবাসী সহ্য করে আসছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্লিপ্ত ভূমিকাকেও আমরা দায়ী করতে চাই। এ শহরের পরিবেশ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তাদের কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখা যায় না।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব অনাচারের অবসান হওয়া দরকার। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু যে উন্নয়ন প্রাণ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, যে উন্নয়ন মানুষের নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গাটুকু কেড়ে নেয়, যে উন্নয়ন মানুষের স্বস্ত্বির বদলে দুর্ভোগ বাড়ায়, সেই উন্নয়ন আমরা চাই না। এ শহর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই শহরের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করা উচিৎ। দ্বিতল সড়কের গাছগুলো নিছক একেকটি বৃক্ষ নয়, এর সঙ্গে চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আবেগ জড়িত। এই গাছের শরীরে কুড়াল চালানোর কোনো দুঃসাহস যেন কেউ না করে, এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই। সিডিএকে বলব, অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করুন। দ্বিতল সড়ক এখন যেভাবে আছে সেভাবেই রাখুন। অন্যথায় সিপিবি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলবে।