ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

পররাষ্ট্রসচিব হতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছে, জসীম উদ্দিন নতুন পররাষ্ট্রসচিব হতে যাচ্ছেন। মাসখানেকের মধ্যে তাঁকে নিয়োগের আনুষ্ঠিকতা চূড়ান্ত হবে।

 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো (২১ আগস্ট) রাতে এমনই একটি খবর প্রচার করে। ‘

 

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার এক দাপ্তরিক আদেশে জসীম উদ্দিনকে অবিলম্বে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, জসীম উদ্দিনকে ঢাকায় বদলির আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি শিগগির ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটছে। ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পদেও পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় যাঁরা পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিবেচনায় ছিলেন, তাঁদের কেউ যে হচ্ছেন না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।

 

 

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তিতে থাকা ছয় রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন, এমন কূটনীতিকদের চুক্তিতে না রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিং থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিনকে ফেরানোর সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ। চীনের আগে কাতার ও গ্রিসেও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী জসীম উদ্দিনের অবসরে যাওয়ার কথা ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। কূটনীতিক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও পাকিস্তানে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদেও কাজ করেছেন।

 

বর্তমান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ১৯৮৫ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। স্বাভাবিক নিয়মে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছর তাঁকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর।

 

অতীতেও পরিবর্তনের নজির:

 

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত সামরিক সরকারের সময় পররাষ্ট্রসচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০০১ সালে পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিযুক্ত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এ দায়িত্বে ছিলেন প্রায় চার মাস।

 

 

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌহিদ হোসেন (বর্তমানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সময় বার্লিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ বি মঞ্জুর রহিমকে পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশ্য তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব নিয়োগের পরপরই সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়। পরে তৌহিদ হোসেনকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্য ইমেইল

পররাষ্ট্রসচিব হতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন

প্রকাশিত : ১২:৩৮:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছে, জসীম উদ্দিন নতুন পররাষ্ট্রসচিব হতে যাচ্ছেন। মাসখানেকের মধ্যে তাঁকে নিয়োগের আনুষ্ঠিকতা চূড়ান্ত হবে।

 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো (২১ আগস্ট) রাতে এমনই একটি খবর প্রচার করে। ‘

 

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার এক দাপ্তরিক আদেশে জসীম উদ্দিনকে অবিলম্বে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, জসীম উদ্দিনকে ঢাকায় বদলির আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি শিগগির ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটছে। ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পদেও পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় যাঁরা পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিবেচনায় ছিলেন, তাঁদের কেউ যে হচ্ছেন না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।

 

 

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তিতে থাকা ছয় রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন, এমন কূটনীতিকদের চুক্তিতে না রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিং থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিনকে ফেরানোর সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ। চীনের আগে কাতার ও গ্রিসেও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী জসীম উদ্দিনের অবসরে যাওয়ার কথা ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। কূটনীতিক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও পাকিস্তানে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদেও কাজ করেছেন।

 

বর্তমান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ১৯৮৫ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। স্বাভাবিক নিয়মে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছর তাঁকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর।

 

অতীতেও পরিবর্তনের নজির:

 

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত সামরিক সরকারের সময় পররাষ্ট্রসচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০০১ সালে পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিযুক্ত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এ দায়িত্বে ছিলেন প্রায় চার মাস।

 

 

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌহিদ হোসেন (বর্তমানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সময় বার্লিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ বি মঞ্জুর রহিমকে পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশ্য তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব নিয়োগের পরপরই সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়। পরে তৌহিদ হোসেনকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।