ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির তাপমাত্রা বুধবার (২৯ মে) রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কিন্তু এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সত্যতা যাচাইয়ে ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। খবর এনডিটিভির।
জানা গেছে, দিল্লির সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাটি রেকর্ড করে মুঙ্গেশপুরের স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া কেন্দ্র। একই সময় ভারতের অন্যান্য কেন্দ্র ৪৬-৫০ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড করে। হঠাৎ ৫২.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার খবরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়; মুঙ্গেশপুরের স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া কেন্দ্রে বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২.৯ ডিগ্রি।
তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেও পরক্ষণেই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর। প্রশ্ন উঠে, আসলেই কি তাপমাত্রার পারদ এতই ঊর্ধ্বমুখী?
এ বিষয়ে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের ডিজি মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, দিল্লির ২০টি আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিতেই তাপমাত্রার পতন দেখা গেছে। সেগুলোতে তাপমাত্রা ছিল ৪৬-৫০ ডিগ্রির মধ্যে।
তাই বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুঙ্গেশপুরের কেন্দ্রটির পরিমাপযন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্তকারী দলকেও সেখানে পাঠানো হয়েছে।
দিল্লির ওই ভয়াবহ তাপমাত্রা বিশ্বাস করতে পারছেন না ভূবিজ্ঞানমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। তিনি বলেন, দিল্লির তাপমাত্রা ৫২.৩ ডিগ্রি হওয়া কিছুটা অস্বাভাবিক। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।
তবে দিল্লির অন্যান্য অংশের চেয়ে মুঙ্গেশপুরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণও ব্যাখ্যা করা যায়। বলা হচ্ছে, রাজস্থানের তপ্ত মরুভূমি থেকে আগত গরম বাতাস শহরের উপকণ্ঠগুলোতে আঘাত হানে। পর্যাপ্ত গাছপালা ও জলাশয় না থাকায় তা সেখানে দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে। মুঙ্গেশপুর, নরেলা ও নাজফগড়ের মতো এলাকাগুলো প্রাথমিকভাবে ওই গরম বাতাসের শিকার। সেখানকার মানুষজন বুঝেছেন এ গরমের অনুভূতি কতটা তীব্র। আবহাওয়া বিভাগের আঞ্চলিক প্রধান কুলদীপ শ্রীবাস্তবও সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের যুক্তি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
এদিকে বুধবার বিকেলে বৃষ্টি হওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে কিছুটা নিস্তার পেয়েছে দিল্লি। কমেছে বায়ুদূষণও।
এর আগে দুপুরে দেশটিতে বর্তমানে কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার বর্ণনায় স্থানীয়রা বলেছেন, উত্তর ভারত যেন উনুনে বসানো তপ্ত কড়াই। সঙ্গে আগুন বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাসিন্দাদের টিকে থাকাই দায়।
দিল্লি ছাড়াও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলও তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে মরুভূমির রাজ্য রাজস্থানে বুধবার ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হরিয়ানায় ৫০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
পিছিয়ে নেই বিহারও। এখানকার তাপমাত্রা ৪৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নজফগড়ের তাপমাত্রা ৪৯.৮ ডিগ্রি, মধ্যপ্রদেশের ঝাঁসিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯ ডিগ্রি। এ ছাড়া আরও কিছু অঞ্চলে কমবেশি তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। সঙ্গে তীব্র রোদ সব বয়সের মানুষকে কাবু করে রেখেছে।
এদিকে কিছুটা স্বস্তির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। তাদের মতে, আরব সাগর থেকে আর্দ্র বাতাসের প্রবেশের কারণে দক্ষিণ রাজস্থানের বারমের, যোধপুর, উদয়পুর, সিরোহি ও জালোরে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার পতন রেকর্ড করা হয়েছে। যা উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপপ্রবাহ হ্রাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন ডেটা বলছে, এই হ্রাস প্রবণতা উত্তর দিকে আরও প্রসারিত হবে এবং ৩০ মে থেকে তাপপ্রবাহের অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে শিথীল হয়ে আসবে।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গোপসাগরের আর্দ্র বাতাস বয়ে আসবে। এ প্রবাহের ফলে উত্তরপ্রদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে পারে।