বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে সংকটে পড়া ব্যাংক তুলনামূলক ভালো ব্যাংক থেকে ধার পাবে। আগামী রোববার থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে ব্যাংকগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে সংকটে থাকা পাঁচ ব্যাংক। এখন অতিরিক্ত তারল্য থাকা ব্যাংককে রাজি করাতে পারলেই টাকা পেতে সমস্যা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, আমানত বা প্লেসমেন্ট হিসেবে দুর্বল ব্যাংকে এ অর্থ রাখবে ভালো ব্যাংক। এর জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এখন চুক্তিপত্রের বিপরীতে এসব ব্যাংক নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষ ধার পাবে। তবে সবল ব্যাংককে রাজি করাতে হবে। তখন ওই ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সাপেক্ষে ঋণ দেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি জানিয়ে পাঁচ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাওয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে চুক্তি সম্পন্ন করে ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি হয়ে গেছে। এখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর নির্ভর করবে তারা কবে নাগাদ অর্থ নিতে পারবে বা দেবে।
কবে নাগাদ টাকা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরিদউদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাওয়া সব কাগজপত্র আমরা জমা দিয়েছি। কেউ দিতে রাজি হলে রোববারই পাব।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ৮ ব্যাংক এস আলমের দখলে ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ধার দেওয়া মানে সরাসরি টাকা ছাপানোর মতো। এতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে, যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে এসব ব্যাংক ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে।
জানা যায়, নগদ টাকার সংকট মেটাতে বিশেষ ধার চেয়ে আরও আবেদন করেছে—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। ৩ আগস্ট এক্সিম ব্যাংককে তিন মাসের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ব্যাংককে এখনই টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ইসলামী ব্যাংকের নগদ প্রবাহ ভালো থাকায় আপাতত বিশেষ ধার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে ১১ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে, এগুলোসহ কয়েকটি থেকে টাকা তোলার ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। এ কারণে কিছু ব্যাংক চরম সংকটে পড়ছে।