সম্প্রতি দেশে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আলোচনায় সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শুধু অন্তর্জালেই নয়, চায়ের দোকান কিংবা যে কোনো আড্ডা-আলোচনায় উঠে আসছে বিষধর রাসেলস ভাইপার প্রসঙ্গ।
সম্প্রতি রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বেশকিছু জেলায়। এই সাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মানুষ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাপ দেখলেই সেটিকে মেড়ে ফেলতে উদ্যত হচ্ছেন আতঙ্কিত লোকজন।
রাসেলস ভাইপার নামটি নিয়েও অনেকের মধ্যে রয়েছে কৌতূহল। বাংলাদেশে যদিও এই সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চন্দ্রাকৃতি ছোপ ছোপ গোল দাগের জন্য এ নামকরণ হয়ে থাকতে পারে।
সাপটির পিঠে যে ফোটাগুলো রয়েছে, সেগুলো দেখতে আবার শেকলের মতো, একটির সঙ্গে আরেকটি জুড়ে দেয়া। তাই অনেকে আবার এদের ডাকে চেইন ভাইপার বা শেকলবোড়া নামেও। পরিত্যক্ত উইঢিবি এদের বসবাসের খুবই পছন্দের জায়গা, এজন্য উলুবোড়া নামেও এদের ডাকে কেউ কেউ।
সাপটি দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। কারণ চন্দ্রবোড়ার সঙ্গে অজগরের গায়ের রঙের অদ্ভুত মিল রয়েছে, যা মুহূর্তের জন্য মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়।
আর এই মুহূর্তের দ্বিধায় ঘটে নির্মম দুর্ঘটনা। এমনিতে অলস হলেও আক্রমণের সময় রাসেলস ভাইপার অত্যন্ত ক্ষিপ্র। ছোবল দেয়ার সময় তীব্রগতিতে স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে ওঠা রাসেলস ভাইপারের আক্রমণের গতি এতটাই তীব্র যে, এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে ছোবল দিতে পারে সে। ফলে এই সাপ কিলিং মেশিন নামেও পরিচিত।
ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত উপমহাদেশে সাপ নিয়ে কাজ করতে এসেছিলেন স্কটিস সার্জন প্যাট্রিক রাসেল। এই উপমহাদেশের সাপের শ্রেণিবিন্যাসের বা ক্যাটালগিংয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। ১৭৯৬ সালে তিনি প্রথম কাগজে–কলমে এ অঞ্চলের অনেক সাপের পরিচিতি এবং বিশ্লেষণ করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়াও।
তার নাম অনুসারেই এই সাপের নামকরণ করা হয়। সেই সময় রাসেল সাহেবের সতীর্থ বিজ্ঞানীরা তার নাম জুড়ে দেয় এই সাপটির সঙ্গে। সেই থেকে চন্দ্রবোড়া হয়ে যায় রাসেলস ভাইপার।
বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাপ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাপে কামড়ানোর চিকিৎসায় প্রথম ১০০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের মধ্যে ১০টি অ্যান্টিভেনম নিতে হয়। এটি পেতে হলে দ্রুততম সময়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু মানুষ এটি না করে ওঝার কাছে গিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করার কারণে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।