সামির বান্দেকারকে হয়তো আপনি চিনতে পারছেন না, সত্যি বলতে বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজের জন্য স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র যে চারজন আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারির নাম ঘোষণা করেছে তাদের কাউকেই হয়তো আপনি চিনেন না৷ আমি নিজেও এই পাঁচজনের নাম আগে কখনো শুনিনি, আসলে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ গুলো অল্পস্বল্প দেখা হলেও আম্পায়ারদের কখনো খেয়াল করা হয়নি।
সামির বান্দেকার চারজন আম্পায়ারের ভেতর সবচেয়ে সিনিয়র, এবং এই ভদ্রলোকের আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার বেশ লম্বা।
পাশাপাশি একটা “বিব্রতকর” ঘটনার জন্যেও আলোচিত তিনি ভারতে। আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করার সময় একবার “নিখোঁজ” হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
সাবেক এই ভারতীয় আম্পায়ার ১৯৯৭ সালে নারীদের ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন।
২০০২ সালে গুয়াহাটিতে ভারত-জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে ম্যাচে অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব পালন করেন, অর্থাৎ ছেলেদের ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে অভিষিক্ত হন তিনি।
ভারতের মাটিতে তিনটি টেস্ট ম্যাচে টিভি আম্পায়ার হিসেবেও আইসিসির হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন সামির বান্দেকার। ভারতে থাকাকালীন ৪৫ বার ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেছেন তিনি। আর এই ভারতের মাটিতেই বিব্রতকর এক ঘটনার জন্ম দেন তিনি।
ডিসেম্বর ২০০৬ সাল, দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশ। ডিসেম্বরের ৪ তারিখ ছিল ম্যাচের শেষ দিন।
এমনিতে ম্যাচের ভাগ্যে হয়তো ড্র’ই লেখা ছিল, কিন্তু শেষ দিনে দিল্লি চেয়েছিল যতটুকু সম্ভব ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নিতে পরের ম্যাচের জন্য। তাছাড়া শেষ দিনে আশির ঘরে অপরাজিত ছিলেন আকাশ চোপড়া, যিনি প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন, ফলে জোড়া সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিল আকাশ চোপড়ার সামনে।
ঘটনার দিন সকাল ৯.১৫ মিনিটে দুই আম্পায়ার শিভারাম এবং সামির বান্দেকার কুয়াশার জন্য সৃষ্ট আলোক স্বল্পতাকে কারন দেখিয়ে ম্যাচ স্থগিত করেন।
ঘটনার শুরু এরপরই, বেলা আনুমানিক ১০.৪৫ বাজে তখন, কুয়াশা কেটে গিয়ে আকাশে ঝলমলে রোদ, শীতের সকালে ক্রিকেট খেলার জন্য দুই দল যখন মাঠে নেমে গা গরম করছে ঠিক তখনই দেখা গেল ম্যাচ রেফারি শ্যাম বরণ ব্যানার্জি এবং আম্পায়ার সামির বান্দেকার মাঠে নেই! তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
এদিকে দুই দলের প্লেয়াররা মাঠে নামার জন্য অপেক্ষা করেই যাচ্ছেন৷ আনুমানিক বেলা ১২.০০ টার দিকে মাঠে ফিরে আসেন ম্যাচ রেফারি ব্যানার্জি এবং আম্পায়ার সামির। মাঠে ফিরেই তারা লাঞ্চের ঘোষণা দিয়ে দেন।
এর ভেতর হয়েছে কি, লাঞ্চ চলাকালীন আবার আলোক স্বল্পতা দেখা দেয়, দিনের তখনো দুই সেশন বাকি, অথচ আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারি সিদ্ধান্ত নেন দিনের খেলা বাতিল করে দেওয়ার। ফলে ম্যাচটা ড্র হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ম্যাচ বাতিল করার কিছুসময় পরেই আবার রোদ উঠে, এবং দিল্লি, উত্তর প্রদেশ দুই দলের কোচই খেলার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু সেটা কি আর হয়! একবার ম্যাচ বাতিল করে দিলে সেটা তো আর শুরু করা যায়না যেখানে রেজাল্ট পর্যন্ত ঘোষণা হয়ে যায়।
ম্যাচ অফিশিয়ালদের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হয় দিল্লি এন্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট এসোসিয়েশন (DDCA) বরাবর। ম্যাচ রেফারি ব্যানার্জি অবশ্য বলেছিলেন তিনি টয়লেটে ছিলেন, মানে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তিনি নাকি টয়লেটে ছিলেন। ভারতের একটি পত্রিকার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে সেদিন আসলে কি হয়েছিল?
ঘটনা হচ্ছে, ফিরোজ শাহ কোটলার অদূরে সেন্ট স্টিফেনস গ্রাউন্ডে পাঞ্জাব এবং বেঙ্গল অনূর্ধ্ব-২২ দলের খেলা চলছিল৷ ম্যাচ রেফারি ব্যানার্জি বাঙালি হওয়ায় উনার আগ্রহ ছিল ম্যাচটা দেখার৷ তাই মিস্টার ব্যানার্জির ইচ্ছায় তিনি এবং সামির বান্দেকার চলে গিয়েছিলেন সেন্ট স্টিফেনস গ্রাউন্ডে৷ বেঙ্গল এবং পাঞ্জাবের ম্যাচে যখন লাঞ্চ দেওয়া হয় তখন তারা ফিরে আসেন নিজেদের রঞ্জি ম্যাচে, এবং এসেই লাঞ্চ ডিক্লেয়ার করেন।
এবং কোন এক অজানা কারনে দিনের দুই ইনিংস বাকি থাকতে তারা অপেক্ষা না করেই ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আবার মাঠ থেকে চলে যান। সেসময় DDCA এর সাধারণ সম্পাদক নিজে বলেছিলেন লাঞ্চের এক ঘন্টা পর খেলা শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত আলো ছিল।
যাইহোক, এরপর সামির বান্দেকার আর খুব বেশিদিন ভারতে থাকেননি, আমেরিকা প্রবাসী হয়ে যান এবং পরে সেখানেই থিতু হন।
২০১৫ সাল থেকে তিনি আমেরিকান অঞ্চলে আইসিসির সহযোগী দেশ গুলোর ম্যাচে আম্পায়ারিং শুরু করেন।
২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন যুক্তরাষ্ট্র-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের মাধ্যমে৷ বর্তমানে তিনি ক্রিকেট ইউএসএ’র আন্তর্জাতিক প্যানেল আম্পায়ার।
২০২২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচেও অন-ফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন ৬০ বছর বয়সী এই আম্পায়ার। বর্তমানে ইউএসএ’র সবচেয়ে অভিজ্ঞ আম্পায়ার এই সামির বান্দেকার।