সারা দেশে বজ্রপাতে দুই শিক্ষার্থীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (১৯ মে) তিনটি জেলায় বজ্রপাতে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। জেলা প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফেনীতে দুইজন, কুমিল্লায় একজন ও চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও মাটিরাঙ্গায় বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয়জন আহতের খবর পাওয়া যায়। এ বজ্রপাতে রাউজানে দুটি গরু মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়।
ফেনীর ছাগলনাইয়ার দুটি পৃথক স্থানে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। একজনের নাম মাহাদী হাসান (২৩)। সে অনার্স প্রথমবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছিল।
জানা গেছে, রোববার (১৯ মে) দুপুর ২টার দিকে রাধানগর ইউনিয়নের উত্তর কুহুমা গ্রামের মাঠ থেকে কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মাহদী হাসানের পিতা আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, বজ্রপাতে তার ছেলে দুর্ঘটনার শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মজুমদার জানান, নিহত মাহাদী হাসান এলাকায় ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অন্যজন, ঘোপাল ইউনিয়নের দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া এলাকার জালাল মাস্টার বাড়ির ফজলুল করিমের ছেলে শাহীন মাহমুদ অভি। সে নিকুঞ্জরা মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।
রোববার (১৯ মে) একই সময় ঘোপালের দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া এলাকায় বাড়ির পাশে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারান অভি।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তাদের বাড়িতে গিয়েছি। সন্তানের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা):
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বজ্রপাতে আনোয়ারুল হক (২৮) নামের এক মাটিকাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার বারগরিয়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে।
রোববার (১৯ মে) দুপুরে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের খিরনশাল-লনিশ্বর কৃষি মাঠে এ ঘটনা ঘটে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার মুন্সীরহাট ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন মজুমদার রানা। এ সময় আহত হয়েছেন আরেক শ্রমিক একই এলাকার মজিবুর রহমান।
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বজ্রপাতে দ্বগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ সামশুল আলম (৩৫)। দ্বগ্ধ হওয়ার পর ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রোববার (১৯ মে) ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এর আগে, গত ৬ মে ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সামশুল ভূজপুর থানার পাশে বজ্রপাতে দগ্ধ হন। বজ্রপাতে তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তার মৃত্যু হয়।
রাউজান (চট্টগ্রাম)
রোববার (১৯ মে) বেলা ১১টার দিকে রাউজানের উত্তর গুজরা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন জমিতে বজ্রপাতে কৃষক শামসুল আলমের (৫৯) ২টি গরু মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত শামসুল আলম জানান, সকালে ঘাস খাওয়ার জন্য গরু দুটিকে জমিতে বেঁধে আসেন তিনি। কিছুক্ষণ পর প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি শুরু হলে গরু দুটি আনতে চেয়েও বজ্রপাতের কারণে বের হতে পারেননি। বৃষ্টি থামার পর সেখানে গিয়ে দেখেন গরুগুলো মারা গেছে।
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি)
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বজ্রপাতে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তাদের ২টি ছাগল মারা যায়। রোববার (১৯ মে) বিকেলের দিকে উপজেলার ১নং ওয়ার্ডের গাজিনগর জুম্মাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, বিকেলের দিকে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ঠিক আগ মুহূর্তে ওই পরিবারের সবাই একটি খোলা মাঠে ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যখন তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হয় তখন সবাই পার্শ্ববর্তী একটি ছোট ঘরে আশ্রয় নিচ্ছিলেন। এ সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে একই পরিবারের ৫ জনসহ ১ প্রতিবেশী আহত হন।
আহতরা হলেন, একই পরিবারের রাবেয়া বেগম (৩০) স্বামী মো. আনিছ, আনছার আলীর ছেলে সরাফত আলী (৩২) ও মো. আনিছ (৩৫), তাদের মা সরবানু (৫০), মালেকের ছেলে মোস্তফা (৩৫) এবং প্রতিবেশী মালেকের ছেলে লোকমান হোসেন (৫০)।
এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহাদ।