ঢাকা , বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

দেশে এলো বড় চার জাহাজ সয়াবিন তেল

রমজানের বাকি এখনো আড়াই মাসেরও বেশি! এর মধ্যেই বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। কোম্পানিগুলোই তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ মুহূর্তে সাধারণ ক্রেতারা ‘প্রভাব’ আঁচ করতে না পারলেও ঠিকই চাপে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বর্তমানে বাজারে সয়াবিন তেলের (বোতলজাত) সংকট রয়েছে। চাহিদামতো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

 

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিনের ব্যবধানে এসেছে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের চারটি জাহাজ। এ জাহাজগুলোর মাধ্যমে ৫২ হাজার টন সয়াবিন তেল আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। যদিও চারটি জাহাজই ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার বন্দরগুলো থেকে এক মাস আগেই রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে।

 

অন্যদিকে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই তেল সংকটের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার।

 

 

ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের যে সাময়িক সংকট চলছে তা কেটে যাবে। সোমবার সয়াবিনের দাম সমন্বয় করায় রোজার আগে আমদানি আরও বাড়বে।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শনিবার এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামে দুই জাহাজে বন্দরে আনা হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বন্দর জলসীমায় পৌঁছেছে এমটি সানি ভিক্টরি ও এমটি জিঙ্গা থ্রেশার নামের আরও দুটি জাহাজ। এই দুই জাহাজে রয়েছে ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এর মধ্যে এমটি আরডমোর শায়ানি জাহাজ থেকে তেল খালাস শেষ হয়েছে। সোমবারই জাহাজটি বন্দর ছেড়েছে। জাহাজগুলোর মধ্যে সানি ভিক্টরি এসেছে ব্রাজিল থেকে, বাকি তিনটি আর্জেন্টিনা।

 

জাহাজ কোম্পানি সূত্র জানায়, এই চার জাহাজে সয়াবিন তেল আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই ও টিকে গ্রুপ। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপের ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল রয়েছে।

 

 

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ে সরকারের আশ্বাসে এসব সয়াবিন আমদানির জন্য অনেক আগেই ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। এখন মূল্য সমন্বয়ের কারণে আমদানি সামনে বাড়বে। রোজার সময় সয়াবিনের সংকট হবে না। যদিও এখন যেসব জাহাজ আসছে সেগুলোতে টনপ্রতি সয়াবিনের দর ১ হাজার ২১৭ ডলার পড়েছে।

 

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন থেকে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকায়, যা এত দিন ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৭ টাকা। দাম পুনর্নির্ধারণের কারণে বন্দরে আসা চার জাহাজের সয়াবিন তেলের বাজারমূল্যও বেড়ে গেছে। যেমন বন্দরে আসা ৫২ হাজার টন তেল পরিশোধন করে বাজারজাত হলে বোতলজাত সয়াবিন হিসেবে বাজারমূল্য দাঁড়াবে ৯৯৬ কোটি টাকা। দাম বাড়ানোর আগে যা ছিল ৯৫০ কোটি টাকা।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি হওয়া এই সয়াবিন তেল প্রথমে জাহাজ থেকে খালাস করে রাখা হবে কাস্টমস নিয়ন্ত্রিত ট্যাংক টার্মিনালে। সেখান থেকে শুল্ক–কর পরিশোধ করে কারখানায় পরিশোধনের জন্য নিয়ে যাবে কোম্পানিগুলো। এরপর পরিশোধন করে বাজারজাত হবে এই সয়াবিন তেল। তাতে এক–দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ‘রোজা এলেই অসাধু সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যায়। এবারও রমজান আসার আগেই বাজার ধরতে এমন পন্থা। এখন সংকট দেখালে রোজায় বাড়তি দামেই তেল বিক্রি করা যাবে। কারণ তখন তো ভোক্তারা কিনতে বাধ্য।

 

পাহাড়তলী বাজারের মিজান এন্ড ব্রাদার্সের মো. মিজান বলেন, সয়াবিন তেল তো পাওয়া যাচ্ছে না। সয়াবিন তেল অর্ডার দিলে কোম্পানির কাছ থেকে তাদের অন্য মাল নেয়া বাধ্যতামূলক। ঠেকায় পরে এখন সয়াবিন তেলের সাথে চালের প্যাকেটও নিতে হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত তেল ১৬৫-১৭৩ টাকা। সামনে শুনছি আরো দাম বাড়বে।

 

এদিকে ডিলাররা সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্তের কথা স্বীকার করেছেন। গণমাধ্যমে এর বেশি কথা বলতে রাজি নন তারা।

 

 

 

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্য ইমেইল

দেশে এলো বড় চার জাহাজ সয়াবিন তেল

প্রকাশিত : ০৩:৫৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

রমজানের বাকি এখনো আড়াই মাসেরও বেশি! এর মধ্যেই বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। কোম্পানিগুলোই তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ মুহূর্তে সাধারণ ক্রেতারা ‘প্রভাব’ আঁচ করতে না পারলেও ঠিকই চাপে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বর্তমানে বাজারে সয়াবিন তেলের (বোতলজাত) সংকট রয়েছে। চাহিদামতো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

 

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিনের ব্যবধানে এসেছে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের চারটি জাহাজ। এ জাহাজগুলোর মাধ্যমে ৫২ হাজার টন সয়াবিন তেল আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। যদিও চারটি জাহাজই ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার বন্দরগুলো থেকে এক মাস আগেই রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে।

 

অন্যদিকে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই তেল সংকটের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার।

 

 

ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের যে সাময়িক সংকট চলছে তা কেটে যাবে। সোমবার সয়াবিনের দাম সমন্বয় করায় রোজার আগে আমদানি আরও বাড়বে।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শনিবার এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামে দুই জাহাজে বন্দরে আনা হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বন্দর জলসীমায় পৌঁছেছে এমটি সানি ভিক্টরি ও এমটি জিঙ্গা থ্রেশার নামের আরও দুটি জাহাজ। এই দুই জাহাজে রয়েছে ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এর মধ্যে এমটি আরডমোর শায়ানি জাহাজ থেকে তেল খালাস শেষ হয়েছে। সোমবারই জাহাজটি বন্দর ছেড়েছে। জাহাজগুলোর মধ্যে সানি ভিক্টরি এসেছে ব্রাজিল থেকে, বাকি তিনটি আর্জেন্টিনা।

 

জাহাজ কোম্পানি সূত্র জানায়, এই চার জাহাজে সয়াবিন তেল আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই ও টিকে গ্রুপ। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপের ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল রয়েছে।

 

 

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ে সরকারের আশ্বাসে এসব সয়াবিন আমদানির জন্য অনেক আগেই ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। এখন মূল্য সমন্বয়ের কারণে আমদানি সামনে বাড়বে। রোজার সময় সয়াবিনের সংকট হবে না। যদিও এখন যেসব জাহাজ আসছে সেগুলোতে টনপ্রতি সয়াবিনের দর ১ হাজার ২১৭ ডলার পড়েছে।

 

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন থেকে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকায়, যা এত দিন ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৭ টাকা। দাম পুনর্নির্ধারণের কারণে বন্দরে আসা চার জাহাজের সয়াবিন তেলের বাজারমূল্যও বেড়ে গেছে। যেমন বন্দরে আসা ৫২ হাজার টন তেল পরিশোধন করে বাজারজাত হলে বোতলজাত সয়াবিন হিসেবে বাজারমূল্য দাঁড়াবে ৯৯৬ কোটি টাকা। দাম বাড়ানোর আগে যা ছিল ৯৫০ কোটি টাকা।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি হওয়া এই সয়াবিন তেল প্রথমে জাহাজ থেকে খালাস করে রাখা হবে কাস্টমস নিয়ন্ত্রিত ট্যাংক টার্মিনালে। সেখান থেকে শুল্ক–কর পরিশোধ করে কারখানায় পরিশোধনের জন্য নিয়ে যাবে কোম্পানিগুলো। এরপর পরিশোধন করে বাজারজাত হবে এই সয়াবিন তেল। তাতে এক–দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ‘রোজা এলেই অসাধু সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যায়। এবারও রমজান আসার আগেই বাজার ধরতে এমন পন্থা। এখন সংকট দেখালে রোজায় বাড়তি দামেই তেল বিক্রি করা যাবে। কারণ তখন তো ভোক্তারা কিনতে বাধ্য।

 

পাহাড়তলী বাজারের মিজান এন্ড ব্রাদার্সের মো. মিজান বলেন, সয়াবিন তেল তো পাওয়া যাচ্ছে না। সয়াবিন তেল অর্ডার দিলে কোম্পানির কাছ থেকে তাদের অন্য মাল নেয়া বাধ্যতামূলক। ঠেকায় পরে এখন সয়াবিন তেলের সাথে চালের প্যাকেটও নিতে হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত তেল ১৬৫-১৭৩ টাকা। সামনে শুনছি আরো দাম বাড়বে।

 

এদিকে ডিলাররা সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্তের কথা স্বীকার করেছেন। গণমাধ্যমে এর বেশি কথা বলতে রাজি নন তারা।