বৃষ্টি একেবারেই কমে যাওয়ায় সারা দেশের তাপমাত্রা বেড়েছে। দাবদাহের কবলে পড়েছে দেশের ৪২ জেলা। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল বুধবারও (১৫ মে) দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। কম বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী শনিবার পর্যন্ত। বাড়বে তাপপ্রবাহের বিস্তৃতিও। তবে আগামী রোববার (১৯ মে) থেকে আবার বৃষ্টি বেড়ে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা।
মঙ্গলবার (১৪ মে) নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় দেশের সর্বোচ্চ ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বাইরে আর কোথাও পরিমাপযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে। ফলে তাপমাত্রাও বেড়েছে। আগামী শনিবার (১৮ মে) পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এ সময় মূলত মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯ মে থেকে আবার বৃষ্টি বেড়ে তাপমাত্রা কমা শুরু করবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, রংপুর, খুলনা এবং সিলেট বিভাগসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ভোলা এবং পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
এছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
চলতি গরমের মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৬ মে পর্যন্ত প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বিভিন্ন মাত্রার তাপপ্রবাহ। দেশের ইতিহাসে একটানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহের সবচেয়ে বড় রেকর্ড এটি। ধীরে ধীরে বৃষ্টি বাড়ায় ৭ থেকে ১২ মে পর্যন্ত ছয় দিন কোথাও তাপপ্রবাহ ছিল না। গত এক সপ্তাহ ধরে ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ায় স্বস্তি ফিরেছিল জনজীবনে। তবে বৃষ্টি একেবারেই কমে যাওয়ায় গত সোমবার থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা বেড়েছে।
টানা দাবদাহের মধ্যে ৩০ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। চুয়াডাঙ্গায় সেদিন থার্মোমিটারের পারদ ওঠে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে। আর ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে। মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও ১ থেকে ৩টি মৃদু অথবা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ১ থেকে ২টি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বঙ্গোপসাগরে ১ বা ২টি লঘুচাপ হতে পারে। যার মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
চলতি মাসে নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ থাকতে পারে। তবে উজানে ভারী বর্ষণের ফলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও পানি বিপদসীমার উপরে যেতে পারে।